বাংলাদেশ

বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাই চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্ন্তবর্তি সরকার। এরিমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্ন্তবর্তি সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, এই সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সরকারের নির্বাচনমুখি যাত্রা শুরু হয়েছে।
17304974258997763.jpg
বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাই চ্যালেঞ্জ | ফাইল ছবি

১ নভেম্বর, ২০২৪
Fallback Advertisement

যদিও অনেক প্রশ্নের জবাব মিলছে না এখনও। তাই ধোয়াশাও কাটছে না। তার ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে আশঙ্কা যে, নির্বাচন আসলে কতটা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কেননা এরিমধ্যে কিছু কিছু সহিংস ঘটনা নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীতে সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন দিয়েছে পোশাক শ্রমিকেরা। তার আগে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দীনকে অপসারণের চেষ্টাও হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেরবিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিতে সদস্য হিসাবে আছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাুজ্জামান, মহাহিসাব রক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মো. নূরুল ইসলাম, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোবাশে^র মোনেম, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সি আর আবরার এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিনা বেগম। এই সার্চ কমিটি আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে ১০ জনের নাম সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তার মধ্য থেকে পাঁচ জনের নাম চূড়ান্ত করবেন। সার্চ কমিটি অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে নাম চাইতে পারে। সার্চ কমিটি নিজের বিবেচনায় অথবা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নাম থেকে নিজেরা বাছাই করে নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব করা হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। নির্বাচন করার জন্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নিধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম, নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহ প্রভৃতি কাজ সম্পাদনের পর নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এসব কারিগরি কাজে বড়জোর ছয় মাস সময় লাগতে পারে। ফলে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন একটি সরকার গঠনের ব্যাপারে জনমনে আশা এবং সংশয়ের দ্বৈরথ কাজ করছে।
কারিগরি কার্যাদি সম্পাদনের মাধ্যমেই নির্বাচনের সমুদয় দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর প্রায় তিন মাস হতে চললো। অর্ন্তবর্তি সরকারের সামনে শুধু নির্বাচনী চ্যালেঞ্জই নয়; বরং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি, ২০ শতাংশের মতো আমদানি কমে যাওয়ায় অর্থনীতির নিম্নমুখিতা, নতুন কোনও বিনিয়োগ না আসায় কর্মসংস্থানের সংকট, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সমাজে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এই সব রুটিন দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। যদিও অর্ন্তবর্তি সরকার প্রাতিষ্ঠানিক ও টেকসই সংস্কারের অঙ্গীকার করেছিলো। তবে রাজনৈতিক শক্তিসমূহ এই ব্যাপারে একমত হতে পারছে না। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনমুখি কিছু সংস্কারের পর অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানই জরুরি বলে মনে করছে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটির নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাঁর লিভার সিরোসিসের মতো বড় ধরনের চিকিৎসার জন্যে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জার্মানী পাঠানোর চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে তিনি প্রথমে লন্ডন যাবেন বলে তাঁর চিকিৎসকরা বলছেন। সেখানে তাঁর পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর চিকিৎসার জন্যে জার্মানী কিংবা যুক্তরাষ্ট্র পাঠানো হতে পারে।
খালেদা জিয়ার বর্তমান বয়স ৮৯ বছর। এই বয়সে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন তিনি। ফলে বিএনপি’র জন্যে এটাও একটা বাড়তি চাপের সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ হবে কিনা কিংবা হলেও কীভাবে হবে সেসব বিষয় এখনও নিস্পত্তি হয়নি। জাতীয় পার্টি শনিবার সমাবেশের ডাক দেওয়ায় তাদের পার্টির অফিসে হামলা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরোধীরা বলছেন, জাতীয় পার্টি শেখ হাসিনার দোসর। তাই তার সমাবেশ করার অধিকার নেই। শেখ হাসিনা ও তার দলের শীর্ষ স্থানীয় প্রায় সকল নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারেও তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই ভারতে আশ্রিত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা কিংবা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেবে কিনা তার কিছুই স্পষ্ট নয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন হলে সেটা নিয়ে প্রতিবেশি ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর অবস্থান কী তা জনগণের কাছে এখনও অজানা।
জাতীয় পার্টির শনিবারের সমাবেশের পাশাপাশি একই দিনে হিন্দু বৌদ্ধ ক্রীস্টান ঐক্য পরিষদ ঢাকাসহ সারাদেশে তাদের আট দফা দাবির পক্ষে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সহিংস পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তা থেকে উত্তরণে সরকারের পদক্ষেপ কী এসবই অজানা। শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন কতটা সম্ভব এই প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ মানবাধিকার জোরদারের অঙ্গীকার নিয়ে গড়ে ওঠা সরকারের পক্ষে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। অপরদিকে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আশঙ্কা থেকে যায়। সার্বিক বিবেচনায় রাজনৈতিক সংহতি প্রতিষ্ঠায় আপাতত কোনও বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। সক্রিয় দলগুলোর মধ্যে একটা বোঝাপড়া গড়ে ওঠা জরুরী। আগে নির্বাচন পরে সংস্কার নাকি সংস্কার করে নির্বাচন এমন বিতর্ক চলছেই। আগামীর পরিস্থিতি নিশ্চয়ই এসব প্রশ্নের জবাব দেবে।

শেয়ার

Releted News

No featured items for this category.
test

বিজ্ঞাপন কর্নার।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহ্‌ নেওয়াজ
ফোন: +1646 267-7751 ফ্যাক্স: 718-865-9130
ঠিকানাঃ 71-16 35th Ave, Jackson Heights, NY 11372, USA.
ইমেইল: ajkalnews@gmail.com , editor@ajkalusa.com
কপিরাইট © ২০২৪ সাপ্তাহিক আজকাল কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত
অনুসরণ করুন
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed With Love ByGoFlixza
Developed With Love ByGoFlixza