বিনোদন

‘দুরত্ব’বাড়ছে বাংলাদেশ ও ভারতের সিনেমা অঙ্গনে

৫ আগস্ট বাংলাদেশের সরকার পতনের পর দুই দেশের সম্পর্কে অলিখিত শিথিলতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়েছে চলচ্চিত্রেও।
17263778007987478.jpg
‘দুরত্ব’বাড়ছে বাংলাদেশ ও ভারতের সিনেমা অঙ্গনে | ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্ক

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Fallback Advertisement

শুধু ভিসা জটিলতাই নয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের রোষানলে পড়ার ভয়েও অনেকে ওপারের ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছেন। গত কয়েক বছরে ঢালিউডের সঙ্গে ভারতের টালিগঞ্জের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। দুই ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের মেলামেশাও বেশ বেড়েছিল। তবে ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সরকার পতনের পর দুই দেশের সম্পর্কে অলিখিত শিথিলতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়েছে চলচ্চিত্রেও।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের ইতিহাস বেশ পুরনো। এই প্রচেষ্টা নিরবচ্ছিন্ন ছিল না কখনোই। সরকারি হস্তক্ষেপে বারবার বিরাম চিহ্ন পড়েছে যৌথ প্রযোজনায়। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩), ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ (১৯৯৩), ‘মনের মানুষ’ (২০১০), ‘মনের মাঝে তুমি’ (২০০৩), ‘শিকারী’ (২০১৬) ছবিগুলো দুই বাংলার কলাকুশলী ও দর্শককে কাছে টেনেছিল।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুনরায় শুরু হয়েছিল যৌথ প্রযোজনা।

গত সরকারের সময়ই ঢালিউড শিল্পী-কলাকুশলীদের আন্দোলনের জেরে যৌথ প্রযোজনা ফের থমকে যায়। আন্দোলনকারীরা যৌথ প্রযোজনাকে নাম দিয়েছিল ‘যৌথ প্রতারণা’। পরে তৈরি করা হয় যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা।

সেই নীতিমালায় ছিল নানা শর্তের বেড়াজাল, শর্ত মেটাতে না পারায় কার্যত বন্ধই হয়ে যায় দুই দেশের যৌথ নির্মাণ।

যৌথ প্রযোজনা বন্ধ হলেও ওটিটি ও ইউটিউবের কল্যাণে দুই দেশের শিল্পীরা দুই পারেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বাংলাদেশের ফেরদৌস, জয়া আহসানরা আগে থেকেই ওপারের চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আসছেন। ওপারের পরমব্রত, শ্রাবন্তীসহ বেশ কয়েকজন অভিনয় করেছেন এপারের ছবিতে। বলা চলে, যৌথ প্রযোজনার বাইরে দুই দেশের ছবিতে দুই পারের শিল্পীদের অবাধ বিচরণ লক্ষ করা গেছে এই সময়ে। বাংলাদেশের ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের বড় পর্দায় অভিষেক ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের ছবি ‘আরো এক পৃথিবী’ দিয়ে।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী ইধিকা পালের বড় পর্দায় অভিষেক ঘটেছে বাংলাদেশের ‘প্রিয়তমা’তে। জয়া আহসান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলারা তো শুটিংয়ের কারণে বছরের একটি বড় সময় কলকাতায়ই থাকেন। তাঁদের বাইরে টালিগঞ্জে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন নুসরাত ফারিয়া, বিদ্যা সিনহা মিম, পরীমনি, শবনম বুবলীরা।

গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত নতুন করে এপারের ছবি হাতে নিয়েছেন। স্বস্তিকা মুখার্জি, শ্রাবন্তী চ্যাটার্জি, মিমি চক্রবর্তী, বনি সেনগুপ্ত, কৌশানী মুখার্জিদের হাতেও ছিল এপার বাংলার একাধিক ছবির প্রস্তাব। হঠাৎ করে যেন সব হিসাব-নিকাশ বদলাতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে সরকার পতনের পর বারবার শিডিউল পরিবর্তন করেও শুটিং শুরু করতে পারছেন না হিমু আকরাম ও রাশিদ পলাশ। হিমু আকরামের ‘আলতাবানু কখনো জোছনা দেখেনি’ এবং রাশিদ পলাশের ‘তরী’ ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল ঋতু ও স্বস্তিকার। দুজনই পড়েছেন ভিসা জটিলতায়। কলকাতার একটি দৈনিক এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ১৩ সেপ্টেম্বর। এদিকে বাংলাদেশ থেকে পরীমনি ও শবনম বুবলীও তাঁদের ছবির কাজে যেতে পারছেন না কলকাতায়। এই ভিসা জটিলতার কারণে ওপারে দেবের বিপরীতে ‘প্রতীক্ষা’ ছবিটি ছেড়েই দিয়েছেন বাংলাদেশের তাসনিয়া ফারিণ।

শুধু ভিসা জটিলতাই নয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের রোষানলে পড়ার ভয়েও অনেকে ওপারের ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছেন। গত সপ্তাহে কালের কণ্ঠে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘ন ডরাই’ খ্যাত অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল বলেন, ‘ভারতের একটি ছবি করার কথা ছিল আমার। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিচার করে ছবিটা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ এখন ভারতের ছবি করলে দেশের মানুষ তা পছন্দ করবে না।’

পরীমনি অভিনীত ‘ফেলুবকশি’র শুটিং শেষ হলেও বাকি ডাবিং। তিনি বলেন, ‘আমার আগের ভিসা নেই। নতুন ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে। এখন কবে ভিসা পাব, কবে যেতে পারব তা বুঝতে পারছি না।’ 

কোরবানির ঈদের ব্লকবাস্টার ‘তুফান’-এর প্রযোজক আলফা আই। এই ছবির অভিনয়শিল্পীর তালিকায় রয়েছেন ওপার বাংলার মিমি চক্রবর্তীসহ বেশ কয়েকজন। ছবিটির সিক্যুয়াল তৈরির ঘোষণা আগেই দিয়েছেন নির্মাতারা। সেখানেও মিমি থাকবেন, তা অনেকটা জোর দিয়েই বলেছিলেন রায়হান রাফী। গুজব রটেছে, এই ছবির পরের কিস্তিতে থাকছেন না মিমি, তাঁর চরিত্রে স্থলাভিষিক্ত হবেন দেশীয় একজন অভিনেত্রী।

সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে এটা স্পষ্ট, রাজনীতির মাঠের মতো দুই দেশের চলচ্চিত্রের মেলামেশাও অলিখিতভাবে বন্ধ হতে চলেছে। তবে এখনই আশা হারাতে চান না আলফা আইয়ের কর্ণধার শাহরিয়ার শাকিল। তিনি বলেন, ‘এটা জাতীয় ইস্যু। এটা নিয়ে কথা বলাটা উচিত হবে না। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের ইন্ডাস্ট্রি দীর্ঘদিন ধরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। এটা চলতেই থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগের মতোই আছে। সব কিছু স্বাভাবিক হলে আমরা আবার কাজ শুরু করব।’

শাকিলের মতো নির্মাতা রায়হান রাফীও আশাবাদী। বলেন, ‘ভিসা জটিলতা নিয়ে কিছু বলার নেই। এটা স্পর্শকাতর বিষয়। তবে আমি কিন্তু দুই দিন আগে মুম্বাই ঘুরে এলাম। আমার কোনো সমস্যা হয়নি। আসলে বাংলাদেশ এখনো সব কিছু গুছিয়ে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে কলকাতায়ও চলছে আন্দোলন। সব মিলিয়ে একটু এলোমেলো। আমার মনে হয়, দুই দেশের রাজনৈতিক কোনো ইস্যু চলচ্চিত্র বা বিনোদনের ওপর আসবে না। এটা নিয়ে অযথা চিন্তা করারও দরকার নেই।’

সিএম

শেয়ার

Releted News

No featured items for this category.
test

বিজ্ঞাপন কর্নার।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহ্‌ নেওয়াজ
ফোন: +1646 267-7751 ফ্যাক্স: 718-865-9130
ঠিকানাঃ 71-16 35th Ave, Jackson Heights, NY 11372, USA.
ইমেইল: ajkalnews@gmail.com , editor@ajkalusa.com
কপিরাইট © ২০২৪ সাপ্তাহিক আজকাল কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত
অনুসরণ করুন
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed With Love ByGoFlixza
Developed With Love ByGoFlixza