সারা বিশ্ব
আশ্রয়প্রার্থীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে জার্মানি
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংকটের জের ধরে ইউরোপে শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জার্মানিতে বহিরাগতদের সেই ঢলকে কেন্দ্র করে প্রবল রাজনৈতিক বিবাদ চলছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংকটের জের ধরে ইউরোপে শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জার্মানিতে বহিরাগতদের সেই ঢলকে কেন্দ্র করে প্রবল রাজনৈতিক বিবাদ চলছে।
এএফডি-র মতো চরম দক্ষিণপন্থি দল বিষয়টিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের অনিশ্চয়তার ফায়দা তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলো সংকট সামাল দিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনতার অভিযোগ খণ্ডন করার চেষ্টা করছে।
গত নভেম্বর মাসে চ্যান্সেলর ও মুখ্যমন্ত্রীরা একগুচ্ছ পদক্ষেপের বিষয়ে ঐকমত্যে এসেছিলেন। বুধবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ও ১৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা অভিবাসন নীতির বিভিন্ন দিক ও বাস্তব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বার্লিনে শলৎস বলেন, বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনই তার সুফল দেখা যাচ্ছে না। যেমন আশ্রয়প্রার্থীদের নগদ আর্থিক সহায়তার বদলে ডেবিট কার্ড দেওয়ার পদক্ষেপ কার্যকর করতে সময় লাগছে।
অনেক আশ্রয়প্রার্থী এতকাল নগদ অর্থ নিজেদের দেশে পাঠিয়ে আসছেন বলে সমালোচনা হচ্ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশে শরণার্থীদের আবেদন পরীক্ষার ব্যবস্থার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আগামী ২০ জুন শীর্ষ বৈঠকের আগে সেই উদ্যোগের প্রাথমিক ফলের জন্য মুখ্যমন্ত্রীরা চাপ দিচ্ছেন। সেই সব পদক্ষেপের পাশাপাশি শলৎস অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন সীমিত করতে সব সময়ে সক্রিয় থাকার ওপর জোর দেন। তার মতে, গত ২০-২৫ বছরে এমন সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
প্রধান বিরোধী ইউনিয়ন শিবির সরকারের ওপর আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যার ঊর্ধ্বসীমা স্থির করার জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আন্তজার্তিক ও জাতীয় আইনের আওতায় এমন কোনও সুযোগ নেই বলে সরকার ও কয়েকটি রাজ্য মনে করছে। তবে সব মিলিয়ে নভেম্বর মাসে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে চ্যান্সেলর ও মুখ্যমন্ত্রীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কিছু বাড়তি পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছেন। যেমন বাভেরিয়া ও স্যাক্সনি রাজ্য সরকার ইউক্রেন থেকে আসা মানুষের বিশেষ আর্থিক সুবিধা বন্ধ করে আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে তাদের সাধারণ আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে গণ্য করার দাবি তুলছে।
আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা কমাতে ইউনিয়ন শিবিরের মুখ্যমন্ত্রীরা আরও কিছু দেশের সঙ্গে অভিবাসন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হলে সেখান থেকে আসা মানুষদের ফেরত পাঠানো সহজ হবে।
২০২৩ সালে জার্মানিতে প্রায় তিন লাখ ২৯ হাজার বহিরাগত রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। ২০২২ সালের তুলনায় সংখ্যাটা প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। তার ওপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে প্রায় দশ লাখ শরণার্থী জার্মানিতে এসেছেন।
বহিরাগতদের এমন ঢল সামলাতে বিশেষ করে পৌর স্তরে নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তাদের বাসস্থান, ভাষা শিক্ষা, শিশু-কিশোরদের জন্য কিন্ডারগার্টেন বা স্কুলের ব্যবস্থা অনেক পৌর কর্তৃপক্ষের সাধ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
বাড়তি আর্থিক ব্যয়ভার নিয়েও সমস্যা দূর হয়নি। নভেম্বরের বৈঠকে প্রত্যেক আশ্রয়প্রার্থীর জন্য পৌরসভাগুলোকে বছরে ৭ হাজার ৫০০ ইউরো অনুদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অনেক শহর ও গ্রাম ঘাটতির অভিযোগ করছে।