কমিউনিটি সংবাদ

আমার দেখা নিউইয়র্ক শহর

বয়স যখন তেরো, বইয়ের পাতায় দেখেছি আমেররিকার নিউইয়র্ক শহরের বিখ্যাত কিছু স্থাপনার গল্প। স্কুল জীবন থেকেই মনের গভীরে লুকিয়ে ছিল সেই সব বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলো বাস্তবে দেখার। সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত থাকায় ৩৪ বছর বয়সে এসে সেই সপ্ন বাস্তবে রুপ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। বহুবছরের সেই স্বপ্ন হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে এসেছে নিউইয়র্ক শহরে। স্বপ্নের নিউইয়র্ক শহর নিয়ে লেখার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম।

2022September/নিউইয়র্ক-শহর-2311280954.jpg
আমার দেখা নিউইয়র্ক শহর | ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্ক

২৮ নভেম্বর, ২০২৩
Fallback Advertisement

বয়স যখন তেরো, বইয়ের পাতায় দেখেছি আমেররিকার নিউইয়র্ক শহরের বিখ্যাত কিছু স্থাপনার গল্প। স্কুল জীবন থেকেই মনের গভীরে লুকিয়ে ছিল সেই সব বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলো বাস্তবে দেখার। সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত থাকায় ৩৪ বছর বয়সে এসে সেই সপ্ন বাস্তবে রুপ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। বহুবছরের সেই স্বপ্ন হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে এসেছে নিউইয়র্ক শহরে। স্বপ্নের নিউইয়র্ক শহর নিয়ে লেখার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম।

আমার চোখে নিউইয়র্ক শহর বিশ্বের অন্যান্য শহরের চাইতে ব্যতিক্রম। শুধু শুধু এ শহরকে সারা পৃথিবীর রাজধানী বলা হয়? তা কিন্তু নয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষই এখানে বসবাস করে। এখানকার মানুষ খুবই বন্ধুসুলভ। স্বপ্নের এই শহরে কেউ আসেন জীবিকার সন্ধানে, কেউবা ঘুরতে কিংবা অফিসিয়াল কাজে। আমার জানা মতে পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র নিউইয়র্ক শহরেই প্রায় সব দেশের মানুষ বসবাস করে। একই ছাতার নিচে নানা ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও নানা সংস্কৃতির শহর নিউইয়র্কের মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হলেও এর বিস্তৃতি অনেক যার অনুভূতি লিখে প্রকাশ করা খুব কঠিন। তবে এককথায় এখানকার মানুষের আচরণ খুবই বন্ধুসুলভ। এখানকার মানুষের কাছে কোন তথ্য চাইলে সেটা দেওয়ার জন্য এতটাই ব্যস্ত হয়ে ওঠে তা না দেখলে বুঝতে পারবেন না। আর যে কোন উপকার করতে পারলেই নিজেকে খুব ধন্য মনে করে। বিনিময়ে চায় শুধু ধন্যবাদ নামের শব্দটা। ধন্যবাদ, স্বাগতম, আপনার সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল এমন তিনটা শব্দ এদের নিত্যদিনের সঙ্গি। আবার নিউইয়র্ক শহরের আইনের প্রতি সবাই শ্রদ্ধাশীল। পুলিশি সহায়তা, শহরকে নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ নানা নিয়মানুবর্তীতা এ শহরে না আসলে কখনোই উপলব্ধি হতো না।

আবার নিউইয়র্ক শহর নানা ছদ্মনামেও পরিচিত যার মধ্যে একটি হলো নিউইয়র্ক শহর কখনোই ঘুমায় না! আসলেই তাই! এখানকার মানুষের ব্যস্ততা সত্যিই প্রশংসনীয়। সবচাইতে বড় কারণ হলো নিউইয়র্কের সাবওয়ে সিস্টেম আমার কাছে একটি গোলকধাঁধা। যে কেউ ইচ্ছা করলে রাত দুইটা, তিনটা, চারটা অথবা যখন খুশি বাইরে যেতে পারেন এবং বাড়িতে ফিরতে পারেন। আরেকটি অন্যতম কারণ হতে পারে নিউইয়র্কের অলিগলিতে প্রচুর ক্যাফে, দোকান, ওষুধের দোকান, রেস্তোরাঁ রয়েছে যা সারা রাত খোলা থাকে। সপ্তাহে ৫ দিন কাজের চাপে কারোই দম ফেলার সুযোগ নেই। তবে সাপ্তাহিক ছুটিসহ যেকোন ছুটির দিনগুলো তারা খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করে। যার ফলে পুরো সপ্তাহের সব ক্লান্তি ভুলে যায়। বাংলাদেশ থেকে আসা সবাই এখন আমেরিকার পরিবেশে-সংস্কৃতির সাথে অনেকটাই মিশে গেছে।

নিউইয়র্কে আবহাওয়ার কোন গ্যারান্টি নাই। রাতে ঘুমের সময় আবহাওয়া একরকম দেখলেও সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ প্রতি ঘন্টায় এখানের আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়। তাই প্রতিমূহুর্তে আবহাওয়ার পুর্বাভাস দেখা এখানকার মানুষের নিত্যদিনের রুটিন। আবহাওয়ার উপর নির্ভর করেই বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়।

নিউইয়র্ক শহরের বুকে একখণ্ড বাংলাদেশ
নিউইয়র্ক শহরটিতে বহুসংখ্যক আবাসিক ও অনাবাসিক এলাকা রয়েছে এবং এগুলিকে প্রশাসনিকভাবে পাঁচটি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে; যথা- ম্যানহাটন, ব্রুকলিন, দ্য ব্রংক্স, কুইন্স এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ড, যাদের প্রতিটিরই নিজস্ব জীবনধারা রয়েছে। তবে সবচাইতে আনন্দের বিষয় হচ্ছে নিউইয়র্কের এসব অঞ্চলের জ্যাকশন হাইটস, ব্রুকুলিন, জামাইকা ও ব্রঞ্জসহ কয়েকটি এলকা ঘুরে মনে হচ্ছে আমিরিকার বুকে একখণ্ড বাংলাদেশ। বিশেষ করে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ডের জায়গাটি বাঙালি কমিউনিটির মিলন মেলা হিসেবে পরিচিত। নিউইয়র্কে যতদিন ছিলাম বেশিরভাগ সময়টিতেই এ জায়গাটিতে কেটেছিল। ব্রুকলিনে বৃহত্তম কমিউনিটি হচ্ছে সন্দ্বীপের মানুষ। প্রতি বছরই এখানে বাঙালি কমিউনিটির সর্ববৃহৎ পথ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক কমিউনিটির এ পথ মেলায় এসে এত বাঙালি একই ছাতার নিচে দেখে মনে হয়নি যে আমেরিকার মাটিতে রয়েছি। এখানে এসে জানতে পারি ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ডের জায়গাটি লিটল বাংলাদেশে বাঙালি কমিউনিটির জন্য নতুন একটি প্লাজা। এই প্লাজা বাঙালি কমিউনিটির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখানে যেকোনো মিলনমেলা, সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করা যাবে। এখানে যেকোনো সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে বাঙালি কমিউনিটি। বাংলা ভাষাভাষী বাঙালি এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি মার্কিন সরকারের বিশেষ আন্তরিকতার প্রাপ্তি এই প্লাজা। অপরদিকে নিউইয়র্কের কয়েকটি রাস্তার নামকরণ বাংলাদেশ স্ট্রিট দেখে নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে খুব গর্ববোধ করেছি। অধিকাংশ দোকান-হোটেল রোস্তোরাগুলোর সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা একই সঙ্গে এসব এলাকায় আড্ডা মারলে মনে হয় সত্যিই আমি বাংলাদেশে আছি।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সক্রিয় অংশগ্রহণ
আমার জানা মতে আমেরিকার প্রায় অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে অংশ নিয়ে সিটি কাউন্সিল, কাউন্টি পর্যায়ে বিজয় অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের নানা অনুষ্ঠানে ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান দুই দলের রাজনীতিকরা আসেন এসব বাংলাদেশিদের অভিনন্দন জানাতে। নিউইয়র্কে শুধুমাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নয় এখানকার বাঙালিরা নানা পেশায় অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। বিশেষ করে, ডাক্তার, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবি ও পুলিশ বাহিনীতে অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত রয়েছে। অত্যন্ত সুনামের সাথে তারা দায়িত্ব পালন করে বিভিন্ন সময় নিউইয়র্কে প্রশংসিত হয়েছেন। একইসঙ্গে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমেরিকার মাটিতে এসে প্রতিনিধিত্ব করছে তা শুনলে সত্যি নিজেকে খুব ধন্য মনে হয়। এদের প্রত্যেকে আমাদের মাথার মুকুট। এরাই হলো আমাদের বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর।

নিউইয়র্কের বাঙালিদের ভালো মুহুর্ত
নিউইয়র্ক শহরে এসে যখন নিজ দেশের মানুষের ভালো লাগার মুহুর্তগুলো শুনি তখন নিজেও এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুভূতি জাগে। এখানকার মানুষ প্রাথমিকভাবে এসে নানা কষ্ট অনুভব করলেও একটা সময়ে চাকুরী, ব্যবসায়-বাণিজ্য করে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব আনন্দে দিন পার করে। কেউ ডিভি লটারির মাধ্যমে বা চাকুরী সূত্রে কেউবা ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আসার পর প্রথম কয়দিন পরিবার বা আত্মীয় স্বজনদের মিস করে। কিন্তু নিউইয়র্ক শহরে পাড়ি জমানোর পর একটা সময় নিউইয়র্কের কৃষ্টি-কালচারের সাথে মিশে যায়। এরপর একে একে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছে। কোন পরিবারের সব ভাই-বোন, বাবা-মা ও তার নির্ভরশীল সব পরিবারের সদস্য নিয়ে আসার গল্পও শুনেছি। নিউইয়র্ক শহরে কেন ভালো লাগে এমন প্রশ্ন করলে প্রথমেই সবার উত্তর এখানকার চিকিৎসা সেবা সম্পুর্ণ ফ্রি এবং উন্নত। একই সাথে বাচ্চাদের পড়াশোনা এবং বয়স্ক বাবা-মায়ের জন্য রয়েছে সরকারের বিশেষ সুবিধা। নিউইয়র্ক শহের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খুব প্রশংসনীয়। জাতিসংঘের প্রেগ্রামের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখেছি কয়েক স্তরের নিরাপত্তার চাদর দিয়ে ঢাকা হয়েছে প্রিয় শহরকে। এ শহরের আইন-কানুন সবার জন্য সমান।এখানকার ধনী-গরীবের মূল্যায়ন আলাদা করে দেখা হয় না। নিউইয়র্কে মানুষের শ্রমের মর্যদার সবার জন্য সমান। এসব নানা কারণে নিউইয়র্ক শহরের প্রত্যেকটা মূহূর্ত আমার কাছে অসাধারণ।

এ শহরের প্রবাসীদের কষ্টের মুহুর্ত
স্বপ্নের শহর নিউইয়র্কে কারো মুখে সুখের হাসির পাশাপাশি নানা কষ্টের মূহুর্তগুলোও শেয়ার করার অনুভূতি গ্রহণ করেছি। উন্নত জীবনের খোঁজে দেশটিতে পাড়ি জমিয়ে কেউ বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। কেউবা বাবা মায়ের মৃত লাশের জানাযায় অংশ নিতে পারেননি। কেউ চলমান মামলার কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন বছরের পর বছর। কেউ বা ২/৩ বছরের রেখে আসা ছোট সন্তানের বিয়ের দৃশ্য দেখেছেন অনলাইনে। এখানে সবাই কাজকে প্রধান্য দেয় আবার এসব কাজ করতে গিয়ে অনেকের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও শেয়ার করেছেন। আবার কেউবা নিজ পরিবার নিয়ে এমেরিকায় এসে সংসার জীবনের নানা অশান্তিতেও রয়েছেন। সংসার জীবনে কেউ স্বামী কেউবা স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ করে নানা হতাশায় দিন পার করছেন।

অন্যদিকে নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও স্থিতিশীল জীবনের জন্য নিউইয়র্ক আসেন বেশির ভাগ অভিবাসী। দক্ষিণ আমেরিকা ও পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আসছেন সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এদের সামাল দেওয়া নিউইয়র্ক সিটি কতৃপক্ষের এত সহজ কাজ নয়। এত লোক কোথায় রাখবে, তা নিয়েই এখন হিমশিত খেতে হয়। আর এ কারণেই নিউইয়র্কের জীবন-জাপনের স্বপ্ন এখন দিবাস্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা।

কেন আসতে হবে নিউইয়র্ক শহরে?
আপনি যদি ভ্রমণপিয়াসু হয়ে থাকেন, বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সকল জায়গা ঘুরে দেখতে চান, তাহলে নিউ ইয়র্ককে আপনার ভ্রমণ তালিকায় রাখতেই হবে। অনেকগুলো কারণ আপনার সামনে হাজির করা সম্ভব, যেগুলোর জন্য জীবনে অন্তত একবার হলেও নিউ ইয়র্কে আপনার পা রাখা উচিত। বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলির মধ্যে একটি, নিউ ইয়র্ক (

শেয়ার

Releted News

No featured items for this category.
test

বিজ্ঞাপন কর্নার।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহ্‌ নেওয়াজ
ফোন: +1646 267-7751 ফ্যাক্স: 718-865-9130
ঠিকানাঃ 71-16 35th Ave, Jackson Heights, NY 11372, USA.
ইমেইল: ajkalnews@gmail.com , editor@ajkalusa.com
কপিরাইট © ২০২৪ সাপ্তাহিক আজকাল কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত
অনুসরণ করুন
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed With Love ByGoFlixza
Developed With Love ByGoFlixza