ধর্ম
৯ বারেও পূরণ করা যায়নি হজ কোটা
সরকারিভাবে একটিমাত্র প্যাকেজ ঘোষণা করায় এবার হজযাত্রীদের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে
সরকারিভাবে একটিমাত্র প্যাকেজ ঘোষণা করায় এবার হজযাত্রীদের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। অন্যান্য বছরের মতো দুটি প্যাকেজ হলে খরচ অনেক কমত।
একটি প্যাকেজে বিমান ও বাড়ি ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করায় সরকারি ও বেসরকারি হজযাত্রীদের ব্যয় বেড়েছে। তবে তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেসরকারি হজযাত্রীরা। অন্যান্য বছর হজ নিবন্ধনের সুযোগ পেতে প্রতিযোগিতা চলত। এ বছর ৯ দফা সময় বাড়িয়েও কোটা পূরণ হয়নি। ফেরত দিতে হচ্ছে তিন হাজারের বেশি কোটা। এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করতে ইচ্ছুকদের সৌদি আরবে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করে হজ এজেন্সিগুলো। এ জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীর জন্য ঘোষিত খরচের হিসাব জানার পর বেসরকারি এজেন্সিগুলো তাদের খরচ ঘোষণা করে। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য অনেক বেশি খরচের প্যাকেজ ঘোষণা করার অভিযোগ রয়েছে। আর বেসরকারি এজেন্সিগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ অনুসরণ করায় বেসরকারি হজযাত্রীদের ব্যয় অনেক বেড়েছে।
অন্যান্য বছর সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এতে অপেক্ষাকৃত কম দামি প্যাকেজের সঙ্গে সংগতি রেখে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো। এতে অন্তত ১ লাখ টাকা কমে হজে যাওয়ার সুযোগ হয়। তবে এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় উচ্চমূল্যের মাত্র একটি প্যাকেজ ঘোষণা করায় বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোও তা অনুসরণ করেছে। ফলে বেসরকারি হজযাত্রীদের খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে জানান, হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের মূল নেতৃত্বে থাকা পদস্থ কর্মকর্তাদের হজ-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা ছাড়া তদারকিতেও রয়েছে ঘাটতি। কোনো কোনো পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে হজ সম্পর্কিত যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁদের নির্ভর করতে হয়েছে অন্যদের ওপর। আবার শীর্ষ কর্মকর্তাদের একক সিদ্ধান্তে সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে হজযাত্রীদের স্বার্থ দেখা হয়নি। এতে লাভবান হয়েছে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, একজন কর্মকর্তার কাছে পুরো হজ ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে আছে। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত বছর সরকারের বিভিন্ন হজ টিমে নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের সৌদি আরব নেওয়ার অভিযোগ ছিল। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করে আসা একজন হাজি সমকালকে বলেন, গত বছর করোনার কারণে কমসংখ্যক হাজি থাকায় সৌদি আরবে তেমন ভিড় ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের হাজিদের ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ঘাটতি ছিল। বিশেষ করে বয়স্ক হাজিরা সরকারি সেবাদানকারী টিমের লোকদের কাছ থেকে তেমন কোনো সেবাই পাননি।
গত বছর একেকজন হজযাত্রীর খরচ শেষ মুহূর্তে ৬৯ হাজার টাকা করে বাড়ানো হয়েছিল। হজের পর একেকজন সরকারি হজযাত্রীকে ৪৭ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি এজেন্সিগুলো সেই টাকা ফেরত দেয়নি। অন্যদিকে এবার হজযাত্রীর কোটা পূরণ না হওয়ায় আগামী বছর হজের খরচ আরও বাড়ার অগ্রিম ঘোষণা দিয়ে গত ২ এপ্রিল সরকারিভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম। সরকারি পর্যায় থেকে এমন আগাম ঘোষণা দেওয়া যায় কিনা প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কাশেম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সরকারি সিদ্ধান্ত আমার নামে বিজ্ঞপ্তি আকারে যায়।
কী হলে ভালো হতো
হজ কার্যক্রমের সঙ্গে দীর্ঘ সময় জড়িত ছিলেন এমন কয়েকজন জানান, সরকার ঘোষিত হজ প্যাকেজের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে সৌদি আরবের হারাম শরিফের কাছের বাড়ি ভাড়া ও বিমান ভাড়া। এ ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া কমাতে পারে সরকার। আর কিছু হজযাত্রীকে দূরবর্তী স্থানের বাড়িতে রেখে কম দামি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা সম্ভব। এতে বেসরকারি এজেন্সিগুলোও কম দামের প্যাকেজ রাখতে বাধ্য হবে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান সমকালকে বলেন,